লাইলাতুল ক্বদরের পরিচয় এবং লাইলাতুল কদরে আমাদের করনীয় বর্জনীয় বিষয় সমুহ। (সুরা ক্বদর বাংলা)

মহান আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।

আজকে আমরা যে সব নিয়ে আলোচনা করবো।
  • লাইলাতুল কদর কাকে বলে?
  • লাইলাতুল কদরের আমল/করনীয়,
  • লাইলাতুল কদরের ফজিলত,

প্রথমে আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব,সেটা হল লাইলাতুল কদর কাকে বলে?
লাইলুন শব্দের অর্থ হলো = রাত,
আর কদর শব্দের অর্থ হলো= বিধান/ক্ষমতা/রাজকীয়/মহিমান্বিত/পরিমাপ। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ হলো বিধান অবতীর্ণ হওয়ার রাত বা রাজকীয় রাত, বা সামনের দিন গুলোর তাকদির পরিমাপ করার রাত, এই লাইলাতুল কদর রমজান এর মধ্যে হতে শ্রেষ্ঠ নয় বরং পুরো বছরের মধ্য হতে শ্রেষ্ঠ রাত,
এ রাতে পবিত্র কুরআনুল কারীম নাযিল হয়েছিল এবং এ রাত কে কেন্দ্র করে কোরআন কারীমের মধ্যে একটি সূরা নাযিল করা হয়েছে। 
  1. নিশ্চয়ই আমি এটা (অর্থাৎ কুরআন) শবে কদরে নাযিল করেছি। 
  2. তুমি কি জান শবে কদর কী?
  3. শবে কদর এক হাজার মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ।
  4. সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ ( জিব্রাইল) প্রত্যেক কাজের জন্যে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়।
  5. এটা (এই রাত) নিরাপতদ, যা পরের দিন ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে,।
লাইলাতুল কদর কবে হবে এবিষয়ে হাদিস রয়েছে, হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত,
  حديث عائشة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: " تحروا ليلة القدر في الوتر من العشر الأواخر من رمضان" (بخاري ١٩١٣
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর।" সেটা ১-৩-৫-৭ এবং ৯নং দিন ও হতে পারে,
 
দ্বিতীয় যে বিষয়টি আলোচনা করব,সেটি হল লাইলাতুল কদরের করণীয় কি? বা আমল কি?

লাইলাতুল কদর রাত্রিতে বেশ কয়েকটি আমল হাদীসে উল্লেখ রয়েছে।
(১) এতেকাফ করা, এ বিষয়ে হাদিসের মধ্যে এসেছে,
وكان ﷺ يعتكف العشر الأواخر من رمضان حتى توفَّاه الله
কেননা রাসূল কারীম সাঃ সারা জীবন এতেকাফ করেছিলেন মৃত্যু পর্যন্ত। অন্য হাদিসে আছে, যে বছরে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন সে বছরে উনি বিশ দিন এতেকাফ করেছিলেন, আর এতেকাফকারী ব্যক্তি অবশ্যই অবশ্যই লাইলাতুল কদর পেয়ে থাকে।

(২) সারারাত জেগে থেকে আল্লাহতালার এবাদত বন্দেগী করা, এ বিষয়ে হাদীসে রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন।
من قام في ليلة القدر ايمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه
যে ব্যক্তি ঈমান এবং একনিষ্ঠতার সাথে লাইলাতুল কদর রাত্রিতে সালাত আদায় করবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন, সুবহানাল্লাহ,

(৩) শবে কদর রাত্রিতে বেশি বেশি কোরআনে কারীমের তেলাওয়াত করা
كان جبرائيل يلقاه في ليله من رمضان فيدارسه القران     
জিব্রাইল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম রমজানের প্রতি রাত্রে রাসুল করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কাছে এসে উনাকে কোরআন শুনাতেন, এবং রসূল থেকে কোরআন শুনতেন,

(৪) শবে কদরে বেশি বেশি দোয়া করা, এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করা, তিরমিজি শরীফে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে,
حديث عائشه رضي الله تعالى عنها قالت: قلت يا رسول الله: أرأيت إن علمت أي ليلة ليلة القدر ما أقول فيها؟ قال: قولي اللهم إنك عفو كريم تحب العفو فاعف عني (سنن الترمذي٣٥١٣)
হযরত আয়েশা আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে বলেছি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি এই লাইলাতুল কদর রাত্র পেয়ে যাই, তাহলে আমি কি দোয়া পড়বো? তখন রাসুল করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তিনাকে প্রতিউত্তরে বলে দেন তুমি এই দোয়াটি পডবে,
  اللهم انك عفو كريم تحب العفو فاعف عني
হে আল্লাহ আপনি অতি ক্ষমাশীল এবং আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমিন,

(৫) দান সদকা করার কথাও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে,
কিছু লোকের মুখে শোনা যায়, যে শবে কদরের নির্দিষ্ট কিছু নামাজ রয়েছে, প্রথম রাকাতের নিয়ম এমন, এবং দ্বিতীয় রাকাতে নিয়ম এমন, কিন্তু শবে কদরের নামাজ সম্পর্কে হাদিসে তার কোন ভিত্তি নেই,
এগুলো মানুষের মনগড়া কথা ছাড়া আর কিছুই না,
সুতরাং আমরা অন্য সময় যেমন করে নফল নামাজ পড়ি, ঠিক শবে কদর রাত্রিতেও ঐরকমই নামাজ আদায় করব, 
বরং দীর্ঘ কেয়াম করব, লম্বা লম্বা রুকু করব, সেজদা করব, হাদিসে পাওয়া যায়,যে রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম শবে কদর রাত্রিতে এত লম্বা কেয়াম করতেন যে তার পা মোবারক পর্যন্ত ফুলে যেত,
         
তৃতীয়তো আমরা যে বিষয়টি আলোচনা করব, সেটা হলো শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে,
এই শবে কদর রাত্রি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সূরা দুখানের ৩-৪ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন,
اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰہُ فِیۡ لَیۡلَۃٍ مُّبٰرَکَۃٍ اِنَّا کُنَّا مُنۡذِرِیۡنَ, ٣
فِیۡہَا یُفۡرَقُ کُلُّ اَمۡرٍ حَکِیۡمٍ ۙ (٤)
  • আমি একে (কোরআন কে) নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে(শবে কদের), নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।
  • এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।
এবং সূরা কাদের মধ্যে বলেন, শবে কদর এক হাজার মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ ( জিব্রাইল) প্রত্যেক কাজের জন্যে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়। এটা (এই রাত) নিরাপতদ, যা পরের দিন ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
 
## এই রাতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য মানুষকে মাফ করে থাকেন, এবং তাদের দোয়া গুলোকে কবুল করে থাকেন, 
যে ব্যক্তি এই রাতটি পাবে আল্লাহ তাআলা তাকে ৮৩ বছরের চেয়ে অধিক এবাদত করার সওয়াব তার আমলনামায় দান করবেন, সুবহানাল্লাহ,
এ রাত্রিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের তাকদীর ঠিক করেন, কদর শব্দের এক অর্থ হলো পরিমাপ করা,
এ রাত্রিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের আগামী বছরগুলোর তাকদীরকে পরিপূর্ণ করে দেন, এবং মানুষের গুনাহ গুলাকে মাফকরে নেকি দ্বারা ভরপুর করে দেন, সুবহানাল্লাহ,

সুতরাং আমরা এ রাত্রের কদর করবো এবং গুরুত্ব দিব আল্লাহর দরবারে নিজের বিগত গুণসমূহের জন্য ক্ষমা চাইবো, আল্লাহ না করুক কে জানে যে আমাদের মধ্যে হতে আগামী বছরের রমজান পর্যন্ত হায়াত পাবে! এবং আরেকটি শবে কদর নাও পেতে পারে।

সুতরাং আমরা এই রমজানের শেষ দিনগুলোর কদর করব আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি ক্ষমা চাইবো, এবং গুনাহগুলো মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করব, আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল গুলোকে কবুল করুন। আমীন। 

Post a Comment

Previous Post Next Post