আমরা বাংলাদেশ নামক একটা স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রে বাস করি! যেখানের শতকরা ৯০ ভাগের বেশী মানুষ মুসলিম! দেশের রাস্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান সহ অধিকাংশ মন্ত্রী, সচিব, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী সহ উচ্চ পর্যায়ের অধিকাংশ বিচারক, চাকরিজীবী এবং অন্যান্য লোকজনের অধিকাংশ লোকই মুসলিম! কিন্ত বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালে মনে হয় আমরা কোন অমুসলিম দেশে বসবাস করছি! যেখানে কোন কা ফি র বা মু শ রি ক কোন দল সরকার পরিচালনা করছে! এ ধরণের কথা বলার সংগত কারণ রয়েছে! আজ এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করবো ইন শা আল্লাহ!
●● কিছুদিন আগে একটা খবরে দেশ তোলপাড় হল! আজব ও অভিনব একটা খবর! দেশের একটা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে একজন বিধর্মী লোককে নিয়োগ দেয়া হয়! বিষয়টা নিয়ে দেশ তোলপাড় হলেও আমি এতে মোটেও আশ্চর্য হইনি! কারণ, যে দেশে সব অনিয়মই নিয়ম হিসেবে চলে এবং হুবহু মানুষের মতো দেখতে একধরণের আজব মানোয়ার নামক প্রাণী বাস করে, সেখানে এধরণের কাজ একদম স্বাভাবিক!
●● অনেক পাঠক হয়তো জানেন না মানোয়ার কাকে বলে? যারা দেখতে হুবহু মানুষের মতো, কিন্ত তাদের কাজ একদম জঘন্য! যারা বিভিন্ন উপায়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে দেশের জনসাধারণ কে কষ্ট দেয়, বিভিন্ন ভাবে সরকারি টাকা তসরুফ করে, ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে না, রমযানের সময় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ায়, বিভিন্ন উপায়ে জনসাধারণ কে জিম্মি করে ফায়দা লোকে, অবৈধ ও হারাম ব্যবসা এবং আয়-উপার্জন করে, মানুষের অধিকার হরণ করে, মিথ্যা বলে এবং সব ধরণের খারাপ কাজ করে এবং যারা দেখেও তার প্রতিবাদ না করে তাদেরকে মানোয়ার বলা হয়! সুতরাং মানোয়ারের দেশে সব কাজই বৈধ! অবৈধ বা অনৈক বলে কোন কাজ নেই!
●● মানোয়ার হলে, শুকরের বর্জ্য আমদানি করা যায়, মুসলিমদের জন্য পালনীয় আবশ্যিক সব বিষয় গুলোর বিরোধীতা করা যায়, সুন্দর মুসলিম নাম নিয়েও অবৈধ সব কাজ করা যায়, শিক্ষার্থীদের মাঝে কুশিক্ষা ছড়িয়ে দেবার জন্য পাঠ্যপুস্তকে আজেবাজে লেখা তুলে দেয়া যায়! এক কথায় যা খুশী তাই করা যায়! আর আমরা যে সত্যিই মানোয়ার তার আদর্শ উদাহরণ হলো বর্তমান আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা! আর এই সময় শিক্ষার্থীদের কি শেখানো হচ্ছে, আমি তার দুটিটিমাত্র উদাহরণ এখানে উপস্থাপন করছি!
■■ NCTB-এর অনুশীলন বইয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে শেখানো হয়েছে, আত্মপরিচয় কী?আত্মপরিচয় কেন গুরুত্বপূর্ণ? আমি নিজেকে যেটা মনে করি, সেটা আমার পরিচয়? নাকি সবাই আমাকে যেটা মনে করে, সেটা আমার পরিচয়?
■▪︎এরপর একটা গল্প দেয়া হয়েছেঃ একটি ভাল্লুকের গল্প! সেখানে বলা হয়েছেঃ
-------"এক ভাল্লুক জঙ্গল থেকে বেরিয়েছে। মানুষরা দেখে মনে করছে ভাল্লুকটা একটা দাড়িমোছ না চাঁছা শ্রমিক। ভাল্লুক বার বার বলছে সে ভাল্লুক, কিন্তু কেউ মানছে না। সুতরাং অন্যরা আমাকে কী মনে করলো তা জরুরি না। আমি নিজে আমাকে কী মনে করি, সেটাই আমার পরিচয়!"
■▪︎আর ৭ম শ্রেণীতে শেখানো হচ্ছেঃ আত্মপরিচয় কত রকম হতে পারে? সেখানে কি বলা হয়েছে দেখুনঃ
-------"নারী-পুরুষ ফিক্সড কোনো পরিচয় না। পুরুষাঙ্গ থাকলেও শরীফ যদি মনে করো সে শরীফা, তাহলে সে শরীফা-ই। এটাই আত্মপরিচয়। জৈবিক পরিচয়ে সামাজিক পরিচয়ে সে আবদ্ধ না, আত্মপরিচয়ই তার পরিচয়। পুরুষ শরীরে (biological sex) পুরুষের মতোই জীবনযাপন (gender) করতে হবে, এমন না!"
●● এটা জন মানি নামক আমেরিকান মনোবিজ্ঞানীর বিখ্যাত "জেন্ডার থিওরি-১৯৭১!" জন মানি তার এই ভুল চিন্তাকে এপ্লাই করে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছিলেন দুই ভাইকে! ধ্বংস করে দিয়েছিলেন একটা ছেলের জীবন, তার পরিবারের জীবন। যখন তিনি তার থিওরিকে ছেলেটির উপর এপ্লাই করছিলেন তখন প্রতি সপ্তায় সপ্তায় মিডিয়া কাভার করলেও, যখন তার এই এক্সপেরিমেন্ট ব্যর্থ প্রমাণ হলো, তখন আর তা আর মিডিয়া কাভারেজ পেলো না! যার ফলে তার এই মিথ্যা থিওরি মুখথুবড়ে পরে ঐ সময়ই! যা বিশ্বব্যাপী বাতিল ঘোষণা করা হলেও আমাদের দেশের মানোয়ারেরা সেটা আমদানি করেই ক্ষান্ত হয়নি! তারা সেটা আবার সকল মানোয়ার শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে!
২০২৩ সালের নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে ৭ম শ্রেণীর বিজ্ঞান বই এ মানবজাতির বিবর্তনে বানর থেকে মানবাজতির বিবর্তন এই কুশিক্ষার পাঠ্য বই বিলুপ্ত করা হোক।
মানবজাতির সৃষ্টি পবিত্র কুরআনুল কারীমে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে সেটাই অন্তর্ভূক্ত করা হোক।
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسٰنَ مِن سُلٰلَةٍ مِّن طِينٍ
অর্থঃ আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।
ثُمَّ جَعَلْنٰهُ نُطْفَةً فِى قَرَارٍ مَّكِينٍ
অর্থঃ অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।
ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظٰمًا فَكَسَوْنَا الْعِظٰمَ لَحْمًا ثُمَّ أَنشَأْنٰهُ خَلْقًا ءَاخَرَ ۚ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخٰلِقِينَ
অর্থঃ এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়।
ثُمَّ إِنَّكُم بَعْدَ ذٰلِكَ لَمَيِّتُونَ
অর্থঃ এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে
ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ تُبْعَثُونَ
অর্থঃ অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে।
وَلَقَدْ خَلَقْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعَ طَرَآئِقَ وَمَا كُنَّا عَنِ الْخَلْقِ غٰفِلِينَ
অর্থঃ আমি তোমাদের উপর সুপ্তপথ সৃষ্টি করেছি এবং আমি সৃষ্টি সম্বন্ধে অসাবধান নই।
[আল মুমিনূনঃ আয়াত নং ১২-১৭]
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আসমান জমিনের সকল সৃষ্টজীবের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী একজন ন্যূনতম জ্ঞানের মু'মিন হলেও এই পাঠ্যসূচীর বিষয়ে সকলের প্রতিবাদ জানানো উচিত।
■■ হে মা-বাবা! হে অভিভাবক গণ!দেখুন জন মানির সেই মিথ্যা থিওরি! যা পড়ানো হবে আপনার সন্তানকে। এ কাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন আপনার সন্তানকে?!! এ কোন দুনিয়ায় রেখে যাচ্ছেন তাদের!!?
■■ নিঃসন্দেহে আমি মানোয়ার নই! আপনি এবং আপনারাও মানোয়ার নন! তাহলে আমাদের করণীয় কি? আসুন আমরা আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানার এবং বোঝার চেষ্টা করি এবং এসব অবৈধ কাজকে প্রত্যাখ্যান করি!
লেখাঃ মুহাম্মদ মীযানুর রহমান
Post a Comment